মুনাফা ও লভ্যাংশের প্রভাব নেই ব্যাংকের শেয়ার দরে

;
  • প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২২, ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

বছর শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। তালিকাভুক্ত ৩৩ ব্যাংকের মধ্যে এরই মধ্যে ১৩টি লভ্যাংশ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি গত বছরের তুলনায় বেশি হারে লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে। বাজারমূল্য বিবেচনায় এ লভ্যাংশ অনেকটাই আকর্ষণীয়। কিন্তু তার প্রভাব নেই ব্যাংক খাতের শেয়ার দরে। উল্টো দর হারাচ্ছে বেশিরভাগ ব্যাংক। এমনকি লেনদেনের পরিমাণও কমছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বুধবার এ শেয়ারটির দর ছিল ১৫ টাকা ৭০ পয়সা। লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারটির দর ৬০ পয়সা কমে ১৫ টাকা ১০ পয়সায় নেমেছে। গত মঙ্গলবার প্রিমিয়ার ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশসহ মোট সাড়ে ২২ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার আগে শেয়ারটির দর ছিল মাত্র ১৭ টাকা। কিন্তু ঘোষণার পরদিন দর ৩০ পয়সা কমে ১৬ টাকা ৭০ পয়সায় নামে। এভাবে ভালো লভ্যাংশ ঘোষণার পরও ব্যাংকের শেয়ারদর কমছে।
গতকাল পর্যন্ত যেসব তালিকাভুক্ত ব্যাংক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেগুলো হলো- ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, ডাচ্‌-বাংলা, যমুনা, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার, প্রাইম, শাহ্‌জালাল ইসলামী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, উত্তরা এবং ইবিএল। এসব ব্যাংক নগদ ও বোনাস মিলে সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
ব্যাংক এশিয়া তার শেয়ারহোল্ডারদের ২০২১ হিসাব বছরের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা ২০২০ হিসাব বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের তুলনায় আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে এ বছর সাড়ে ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, যার সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ। একইভাবে প্রিমিয়ার ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশ নগদসহ মোট সাড়ে ২২ শতাংশ এবং প্রাইম ব্যাংক সাড়ে ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে। গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ হারে বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শাহ্‌জালাল ইসলামী এবং উত্তরা ব্যাংক। শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংক তার শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাসসহ মোট ১৫ শতাংশ এবং উত্তরা ব্যাংক ১৪ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ১৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।
গত বছরের হারে এ বছর লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ব্র্যাক, আইএফআইসি, যমুনা এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এর মধ্যে ব্র্যাক সাড়ে ৭ শতাংশ নগদের পাশাপাশি সাড়ে ৭ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেবে। আইএফআইসি ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আর যমুনা ব্যাংক দেবে সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ।
তবে ডাচ্‌-বাংলা সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সঙ্গে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেবে, যা গত বছরের তুলনায় আড়াই শতাংশ কম। ইবিএল গতকাল পর্ষদ সভায় ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। বরাবরের মতো লোকসানি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
লভ্যাংশ ঘোষণাকারী ও মুনাফায় থাকা ১২টি ব্যাংক ২০২১ সালে চার হাজার ৮৩ কোটি টাকারও বেশি নিট মুনাফা করেছে। ২০২০ সালে এ ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ছিল দুই হাজার ৮০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছর নিট মুনাফা বেড়েছে এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা ৪৬ শতাংশ বেশি। শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের ইপিএস আড়াই গুণে উন্নীত হয়েছে। লভ্যাংশ না বাড়ালেও আইএফআইসির ইপিএস ৬৭ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৯ পয়সা হয়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ইপিএস ১ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৩ টাকা ৪৬ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইপিএস ১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ টাকা ১৫ পয়সা।
লভ্যাংশ ও নিট মুনাফা বৃদ্ধির এসব খবর বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত ৩৩ ব্যাংকের মধ্যে ২৩টি দর হারিয়েছে। দর বেড়েছে মাত্র দুটির। বাকি আটটির দর ছিল অপরিবর্তিত। গড়ে সব শেয়ার শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ দর হারিয়েছে।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ আয়ের জন্য বিনিয়োগ করেন না। তারা শেয়ার কিনে বেশি মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা পেতে চান।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি