সব
শ্রীলংকায় সরকারবিরোধী তীব্র বিক্ষোভের মধ্যেই ১৭ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ে নতুন মন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ছাড়া আর কোনো ভাই-ভাতিজাকে রাখেননি গোতাবায়া। তবে অধিকাংশ মন্ত্রী ক্ষমতাসীন পোডুজানা পেরামুনা দল থেকেই নিয়োগ পেয়েছেন।
শ্রীলংকায় চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বাদে মন্ত্রিসভার সবাই পদত্যাগ করেন। ফলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এরপর নতুন সরকার গঠনে সহযোগিতা করার জন্য বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান গোতাবায়া। তবে বিরোধী দল তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। পাশাপাশি দেশজুড়ে গোতাবায়ার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতায় থাকা রাজাপাকসের পরিবারের সব সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার জন্য দাবি জানান। রাজাপাকসের ছোট ভাই বাছিল রাজাপাকসে অর্থমন্ত্রী ছিলেন। আরেক ভাই চামাল রাজাপাকসে কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। আর রাজাপাকসের ভাতিজা নামাল রাজাপাকসে ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
এপ্রিলের শুরু থেকে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধীদের দাবি, রাজাপাকসে জনগণের আস্থা হারিয়েছেন। তবে তা নাকচ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এবার নতুন মন্ত্রিপরিষদ নিয়োগ দিয়ে রাজাপাকসে ইঙ্গিত দিলেন যে বিক্ষোভকারীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করবেন না তিনি। এর আগে বিক্ষোভ ঠেকাতে রাজাপাকসে কঠোর এক জরুরি আইন কার্যকর করেন। কারফিউও জারি করেন তিনি। নিষিদ্ধ করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে তা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকার একপর্যায়ে এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকা সবচেয়ে সংকটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। শ্রীলংকার জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। দেশটির সরকারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্য। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানিসহ জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না সরকার। ডিজেল না থাকায় শ্রীলংকায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানি সংকটে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বের করতে পারছেন না। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। দেশটিতে এর আগে কখনোই এত বেশি সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যুৎ-সংকটে পড়ে দেশটির প্রধান শেয়ারবাজারে লেনদেনও বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটিতে হু হু করে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। কাগজের সংকটে অনুষ্ঠিত হয়নি পাবলিক পরীক্ষা। বন্ধ হয়ে গেছে দৈনিক পত্রিকার ছাপা সংস্করণ। প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে সরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়েছে।
সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে চীন : শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করল চীন। গ্লোবাল টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
আর এটিই শ্রীলংকার অর্থনীতিকে খাঁদে ফেলেছে। যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে থাকে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যদি যুক্তরাষ্ট্র আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে শ্রীলংকার অর্থনীতি আরও ডুবে যাবে। এতে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে পণ্যের আকাশচুম্বী দাম এবং খাদ্য ও জ্বালানি সংকটই শ্রীলংকার অর্থনীতিকে পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলো কীভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বলি হচ্ছে তার বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে শ্রীলংকা। যখন পশ্চিমারা দাবি করছে তাদের নিষেধাজ্ঞা আসলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিন্তু তারা আসলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থে আঘাত করছে। এটিই পরে বিস্তৃত মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
পাঁচ দিন বন্ধ শ্রীলংকার স্টক এক্সচেঞ্জ : শ্রীলংকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সিএসই) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জ। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই কলম্বো স্টক ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনসহ সিকিউরিটিজ মার্কেটের অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাজারটি সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি